ঢাকা উত্তর সিটির ‘বিটিআই’ কোথা থেকে এলো ? প্রতারণার অভিযোগ ডিএনসিসির বিরুদ্ধে

মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট ২০২৩ | 14 বার

ঢাকা উত্তর সিটির ‘বিটিআই’ কোথা থেকে এলো ? প্রতারণার অভিযোগ ডিএনসিসির বিরুদ্ধে

যাদের উৎপাদক কোম্পানি বলা হচ্ছে, সেই বেস্ট কেমিক্যালস বলছে, তারা বাংলাদেশে কোনো বিটিআই বেচেনি।

ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তারের মধ্যে এ রোগের বাহক এইডিস মশা প্রতিরোধের লড়াইয়ে ধাক্কা খেল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।

ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এইডিস মশার লার্ভা নিধনে নগর কর্তৃপক্ষ বিটিআই নামে যে জৈব কীটনাশক এনেছে, সেটি নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।

মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি কীটনাশকটি সরবরাহ করেছে। তারা দাবি করেছে, সিঙ্গাপুরের কোম্পানি ‘বেস্ট কেমিকেলস’ এর উৎপাদক।

তবে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন দেখে বেস্ট কেমিকেলস তাদের ফেইসবুক পেইজে ঘোষণা দিয়েছে, তারা এটি সরবরাহ করেনি। এমনকি তাদের নাম ব্যবহার করে যারা ‘বিটিআই’ সরবরাহ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে তারা।

 

 

আর ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি ওই বিটিআই পরীক্ষা করে দেখার কথা বলেছেন।

ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে চলার মধ্যে মশা নিয়ন্ত্রণে প্রথমবারের মত বিটিআই ব্যবহার নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিল ঢাকা উত্তর সিটি।

কীটনাশকের পুরো নাম ব্যাসিলাস থুরিংয়েইনসিস ইসরায়েলেনসিস। গত ৭ অগাস্ট ঢাকার গুলশানে এর প্রয়োগের কাজ উদ্বোধন করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।

সেদিন নগর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিকেলস কোম্পানি থেকে পাঁচ টন বিটিআই আনা হয়েছে। প্রতি কেজির দাম পড়েছে ৩ হাজার ৩৮৫ টাকা করে। সে হিসাবে পাঁচ টনের দাম পড়েছে ১ কোটি ৬৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

সব মিলিয়ে পাঁচ কোটি টাকার বিটিআই আমদানির কথা বলেছিল উত্তর সিটি করপোরেশন।

সেই অনুষ্ঠানে সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিকেলসের একজন প্রতিনিধির সঙ্গেও সাংবাদিকদের পরিচয়ও করিয়ে দেওয়া হয়। তার নাম জানানো হয় ‘লি কিওয়াং’। বলা হয়, তিনি কোম্পানির এক্সপোর্ট ম্যানেজার এবং তিনি ডিএনসিসির কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবেন।

ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, বেস্ট কেমিকেলস প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছে ১৯৭৮ সালে। তারা নানা ধরনের রিএজেন্ট, কলকারখানার রাসায়নিক, জৈব রাসায়নিক, জৈব কীটনাশক এবং যন্ত্রপাতি উৎপাদন করে।

তবে সোমবার সব হিসাব পাল্টে যায়। বেস্ট কেমিকেলস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় জানায়, বাংলাদেশি কোম্পানি মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে ৫ টন বিটিআই পাঠানোর খবরটি তাদের নজরে এসেছে। সেখানে ‘প্রতারণামূলকভাবে’ তাদের নামটি ব্যবহার করা হয়েছে। তারা এই বিটিআই সরবরাহ করেনি।

বাংলাদেশের মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিকেল তাদের সরবরাহকারী নয় জানিয় এও বলা হয়, লি কিওয়াং তাদের কোম্পানির কেউ নন।

ওই বার্তায় বলা হয়, বেস্ট কেমিকেলসের নাম ব্যবহার করে বিটিআই উৎপাদন, বিক্রি বা সরবরাহকারীদরে বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তাদের আইনজীবী প্রতিষ্ঠান ইনফিনিটাস ল করপোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

ফেইসবুক পোস্টে ইনফিনিটাস ল করপোরেশনের টেলিফোন নম্বরও দেওয়া হয়েছে।

যোগাযোগ করলে পোস্টে ইনফিনিটাস ল করপোরেশনের অ্যাসোসিয়েট লি সুজিয়েন বলেন,“তারা (বেস্ট কেমিকেলস) এ ধরনের কোনো পণ্য সরবরাহ করেনি। বিষয়টি তারা তাদের ফেইসবুক পেইজে জানিয়ে দিয়েছে।”

এ বিষয়ে মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বক্তব্য জানতে পারেনি।

ওই কোম্পানির ওয়েবসাইটে এর মালিকের নাম জানানো হয়েছে মো. আলাউদ্দিন, ঠিকানা দেওয়া আছে পুরানা পল্টনের বায়তুল আবেদ ভবনের অষ্টম তলা।

ওয়েবসাইটে দেওয়া মোবাইল নম্বরে কল করলে সেটি অকেজো দেখাচ্ছে।

মো. আলাউদ্দিনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস করা হলেও সাড়া দেননি।

বিটিআই নিয়ে এই কাণ্ডের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, “যারা এ কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তিনি বলেন, “যে কোনো ধরনের পেস্টিসাইডস আমরা আনি আর যদি তা ঠিক না হয় তাহলে যারা দিয়েছে আমরা অবশ্যই ধরব। আর আমদানিকারকরা কোনো কিছু (প্রতারণা) করলে আমাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগ আছে তারা বিষয়টি দেখবে।”

ঢাকা উত্তর সিটি যে ‘বিটিআই’ এনেছে, তা কাজ করে কি না তাও যাচাই করার কথা বলেছেন মেয়র।

তিনি বলেন, “বেশি না, দুই ঘণ্টা সময় দিতে হবে। আপনারা ল্যাবে যাবেন, দুই ঘণ্টা সময় দিবেন। দেখা যাবে লার্ভা মরে কিনা। যদি মরে তাহলে বুঝতে হবে এটা কাজ করছে। আর যদি না মরে তাহলে বোঝা যাবে এটা ফলস।”

সুত্র :বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

Development by: webnewsdesign.com