বিভিন্ন সময়ে সংবাদপত্রের পাতায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের পিয়ন ও ড্রাইভারদের শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার গল্প থাকলেও এবার বিআরটিএ দালালী করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে নজির স্থাপন করেছেন রাজধানীর স্টাফ কোয়াটারের স্বপন দাস। এ যেন আলিফ লায়লার আলাউদিনের আশ্চর্য প্রদীপের চেয়েও আলৌলিক কারবার। দরিদ্র পরিবারের সন্তান স্বপন দাস ফুলে ফেঁপে ওঠা যেনো জাদুর দৈত্য দানব অথবা আলাউদিনের আশ্চর্য প্রদীপের চেয়েও অভাবনীয় কিছু।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভবনে দালাল চক্র জেঁকে বসেছে। নানা অনিয়ম আর দূর্নীতি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। আর এ দূর্নীতিতে সহযোগিতা করছেন কিছুসংখ্যক অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারি।
স্বপন দাস নিজেকে পরিচয় দেন বিআরটিএ’র অফিস সহায়ক বলে। বাস্তবে তিনি বিআরটিএ’র দালাল কিন্তু অফিসের সবাই তাকে চিনে ভালভাবেই। স্বপন দাস বিআরটিএ’র অফিস সহায়ক পরিচয়ে বাগিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। দেশ বিদেশে রয়েছে বিপুল সম্পত্তি ও দেশের বিভিন্ন রুটে চলা অনেকগুলো বাস। সরকারি অফিসার আসে যায় কিন্তু নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা বিআরটিএ’র দালালের দৌরাত্ব। অনিয়ম দূর্নীতির মধ্যে দিয়ে বিআরটিএ’র নাম বার বার আলোচনায় আসলেও কিছু সংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সহযোগিতায় এই সব দালালরা নিয়মিত সাধারণ গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করছে অফিস খরচের নামে মোটা অংকের টাকা। অনেকে অনেক সময় ধরা পড়লেও ধরাছোয়ার বাহিরে বিআরটিএ’র দূর্নীতি সিন্ডিকেটের প্রধান স্বপন দাস।
অগাধ সম্পত্তি ও অনেকগুলো বাসের এই মালিকের নাম স্বপন দাস কিছুদিন আগেও যিনি ছিলেন বাসা ভাড়ায় আজ তিনি ৬ তলা ভবনের মালিক। কিনেছেন নতুন জায়গা। বিআরটিএতে দালালী করে অত্যন্ত চতুর এই স্বপন দাস নামে বেনামে কিনেছেন বিপুল সম্পত্তি ও অনেকগুলো গাড়ী।
সম্প্রতি স্বপন দাসের তথ্য অনুসন্ধানে নামে আমাদের একটি অনুসন্ধানী দল। রাজধানীর বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভবনে সরজমিনে গেলে দেখা মিলে অফিস সহায়ক বলে পরিচয় দেয়া স্বপন দাসের । বিআরটিএ’র মত সুরক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ ভবনে ফাইল নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্বপন দাস। কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো তিনি বিআরটিএ’র কর্মচারী ; অনুসন্ধানে দেখা যায় তিনি বিআরটিএ’র কেউ নন। দেখলে মনে হবে তিনি অফিসের একজন নিয়মিত কর্মচারী খুব ব্যস্ততা এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে বিভিন্ন কাগজ পত্র নিয়ে দৌড়াদৌড়ি । অফিসের সবাই তাকে এক নামে চেনে স্বপন দাস, অফিসের ডেক্সে তার নাম বলতেই তিনি আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দেন ঐ দিকে। কাছাকাছি যেতেই তিনি ভিতর থেকে আসেন এবং তার হাতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রাদি একজনের কাছে রেখে প্রতিবেদকে নিয়ে ভবনের নিচে চলে যান।
স্বপন দাস এই প্রতিবেদককে বলেন আমি এখানে চাকরি করি কিন্তু এখনো চাকরি পারমানেন্ট হয়নি। তাই খুবই অসুবিধায় আছি। পরে তার ঢাকার স্টাফ কোয়াটারে ৬ তলা বাড়ীর বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলে এ বাড়ি আমি কিনিনি বাবা ব্যবসা করে তৈরী করেছেন। গাড়ীর বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন আমার একটা গাড়ী আছে । তখন প্রতিবেদক আরও ৬ টি গাড়ীর রেজি নম্বর বললে তিনি বলেন ঐ গাড়ি গুলি তার ভাইয়ের নামে। অনেকক্ষণ কথা বলার পর শেষ পর্যায়ে চলে আসার সময় হঠাৎ প্রতিবেদকের পকেটে কিছু উৎকোচ জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায় রাজধানীর ষ্টাফ কোয়াটারে (ঋষি পাড়ায়) তিনি একটি ৬ তলা ভবন তৈরী করেছেন। আর ৭ টি গাড়ির মধ্যে ১ টি তার মালিকানাধীন আর বাকী ৬ টি গাড়ী তার ভাইয়ের নামে বলেন। বিআরটিএতে দালালী করে কিভাবে এত টাকার সম্পত্তি কিনলেন প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে চান। খোজ নিয়ে জানা যায় সম্প্রতি তিনি স্টাফ কোয়াটারে অর্ধকোটি টাকা দিয়ে জায়গা কিনেছেন।
তিনি একেক সময় একেক কথা বলেন, এক সময় বলেন তিনি চাকরি করেন বিআরটিএ তে আবার বলেন হবিগঞ্জ মালিক সমিতিতে । বাস্তবে কোনটারই মিল নেই। বিআরটিএ তে তিনি মাসের ২৪ দিনই ডিউটি করেন ১০ থেকে ৪ টা পর্যন্ত সরকারি চাকুরীজীবির মতই । তবে তিনি এ প্রসঙ্গে কোন মন্তব্য করতে রাজি নন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিএর এক কর্মকর্তা বলেন, স্বপন দাস অনেকদিন যাবত এখানে কাজ করেন তবে তিনি বিআরটিএর কোন কর্মচারী নন। যে কোন কাজ দিলে তিনি করে দিবেন এটা বলেন।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে স্বপন দাসের সাথে কথা বললে তিনি বলেন আমি হবিগঞ্জ মালিক সমিতির চাকরি করি কোথায় জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন দুরন্ত পরিবহনে বেতন ২০ হাজার টাকা। বিশ হাজার টাকায় চাকরি করে কিভাবে জায়গা কিনলেন বলতেই তিনি বলেন আমি গত ২ বছর আগে দুটি গাড়ি বিক্রি করে এফডিআর করে রেখেছিলাম এখন ঐ টাকা দিয়ে জায়গা কিনেছি। মালিক সমিতির চাকরি করে কিভাবে সারাদিন বিআরটিএ অফিসে থাকেন এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান। এক সময় বলেন ভাই আমার পিছনে লাগছেন কেন বড় বড় রাগব বোয়াল আছে তাদের পিছনে লাগছেন না আমার পিছনে লাগছেন ।
বিপুল বিত্তবৈভব, বিআরটির দালালী করেই দু হাতে কুড়িয়েছেন কোটি কোটি টাকা । লোকমুখে শোনা যায় পাশর্^বতী দেশ ভারতে অর্থপাচার করে গড়েছেন সেকেন্ড হোম। প্রতি বছরই তিনি ভারত সহ বিভিন্ন দেশে ভিজিট ভিসায় ভ্রমণ করে থাকেন বলে জানা যায় ।
কোন জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় ? বিআরটিএ;র সামান্য দালাল এত অবৈধ সম্পদ অর্জন কিভাবে করেছেন? দূর্নীতি দমন কমিশন দুদক সহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য সহ বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন আগামী সংখ্যায় ।
Development by: webnewsdesign.com