সওজের চট্টগ্রাম নগরীর পোর্ট এক্সেস সড়কে কমেছে টোল আদায়

শুক্রবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৩ | 42 বার

সওজের চট্টগ্রাম নগরীর পোর্ট এক্সেস সড়কে কমেছে টোল আদায়

চট্টগ্রাম নগরীর পোর্ট এক্সেস সড়কে কমেছে টোল আদায়ের পরিমান। কয়েকটি কারণে টোলের পরিমান কমেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সড়ক নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করা হয়। এতে গাড়ি চলাচল কমে যায় পোর্ট এক্সেস সড়কে । তাছাড়া আউটার রিং রোড ও পোর্ট কানেক্টিং (পিসি) রোডে যানবাহন চলাচল করায় এ সড়কে টোল আদায় কমে যায়।

রাজধানীর চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সাথে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সড়ক ব্যবস্থা। যার ফলে বন্দর নগরী চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সমন্বয় করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক।

সেই সাথে প্রতিটি সড়কের বিকল্প সড়ক তৈরি করে চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো প্রয়োগ করে অবাধ যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি মাইলফলক অর্জন করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম ব্যবস্থাপনায়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন সড়কের সুফলসমূহ যেমন জাতীয় অর্থনৈতিক গুরুত্ব সৃষ্টি করেছে সমানভাবে কিছু বিড়ম্বনার নজিরও রয়েছে।

২০০৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক আমদানি রপ্তানি কর্যক্রম সহজিকরণে সড়ক ও জনপদ বিভাগ চট্টগ্রাম পোর্ট এক্সেস সড়কটি চালু করে। যেহেতু চট্টগ্রাম পোর্ট এক্সেস রোডটি বন্দর কেন্দ্রিক গাড়ি চলাচলের একমাত্র সড়ক হওয়ায় সংগত কারণে এই সড়কটি টোলের আওতায় এনে রাজস্ব আদায়ের একটি উৎস সৃষ্টি করে সড়ক বিভাগ। সম্প্রতি চট্টগ্রামে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সড়ক নেটওয়ার্ক ঢেলে সাজানোয় চট্টগ্রাম পোর্ট এক্সেস রোডে টোল আদায় কার্যক্রমটি চ্যালেন্জের মুখে ফেলে সড়ক কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা কর্মচারীদের।

সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতাধীন চট্টগ্রাম পোর্ট এক্সেস সড়কের টোল আদায় উল্ল্যেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ার কয়েকটি বাস্তবিক কারণ রয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদার হাট চট্টগ্রাম পোর্ট এক্সেস রোড সংলগ্ন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নবনির্মিত চার লেইনের আউটার রিং রোড এর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম পোর্ট এক্সেস রোডের টোল কার্যক্রম হ্রাসে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে । সল্ট গোলা ক্রসিং,ইপিজেড,সিমেন্ট ক্রসিং এলাকার যানজটের দুর্ভোগের কারনে আউটার রিং রোডের ব্যবহার বেড়েছে। এছাড়াও আউটার রিং রোডের আশেপাশে কয়েকটি ট্রাক- কাভার্ড ভ্যান ও লরীর টার্মিনাল চালুর কারণে বাণিজ্যিক ব্যবহারযোগ্য গাড়ির চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে যার ফলে চট্টগ্রাম পোর্ট এক্সেস রোডের গাড়ির সংখ্যা আনুপাতিক হারে কমে যাওয়ায় টোল আদায়ও কমেছে।

এছাড়াও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর নবনির্মিত চার লেইনের পোর্ট কানেক্টিং রোড (পিসি রোড) চালু হওয়ার কারণে চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক ট্রাক- কাভার্ড ভ্যান ও কন্টেইনার বাহী লরীর চলাচল অন্যতম প্রধান কারণ যা চট্টগ্রাম পোর্ট এক্সেস রোডের টোল কার্যক্রমের উপর সরাসরি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

যেহেতু চট্টগ্রাম বন্দরের বারেক বিল্ডিং ১ নং জেটি,গোসাইলডাঙ্গা ২নং জেটি,ফকির হাটের ৩নং জেটি,কাস্টমস হাউজ এর ৪নং জেটিতে পন্য নিয়ে যাতায়াতকারী ট্রাক- কাভার্ড ভ্যান ও কন্টেইনার বাহী লরীগুলো খুব সহজেই পোর্ট কানেক্টিং রোড দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবাধে চলে যেতে পারে। এছাড়াও সম্প্রতি ডলারের সংকটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক আমদানি রপ্তানি কর্যক্রম লক্ষনীয়ভাবে কমে যাওয়ার ফলে বানিজ্যিক গাড়ির যাতায়াত কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ যা চট্টগ্রাম পোর্ট এক্সেস রোডের টোল আদায় কার্যক্রমে প্রভাবিত করেছে।

এছাড়াও ইজারাদার নিয়োগ জটিলতা নিয়ে সড়ক বিভাগের আওতাধীন চট্টগ্রাম পোর্ট এক্সেস রোডে টোল আদায় কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে সড়ক বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের। যার মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য বহনকারী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও কন্টেইনারবাহী লরীগুলোর কিছু সংখ্যক প্রতিদিন পোর্ট এক্সেস সড়ক দিয়ে যাতায়ত করে। দীর্ঘদিন যাবত পোর্ট এক্সেস রোডের ইজারাদারের মাধ্যমে টোল আদায় করলেও বর্তমানে ইজারাদার নিয়োগ জটিলতার কারণে সড়ক ও জনপথ বিভাগ টোল আদায় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর ঠিকাদারের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ঠিকাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ মার্চ ২০২২ পর্যন্ত ৯০ দিনের সময় বর্ধিত করে মন্ত্রণালয় এবং পরবর্তীতে আবেদন করলেও মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। সড়ক ও জনপদ বিভাগের জনবল সংকটের কারণে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ক্রমে মাষ্টাররোলের মাধ্যমে প্রয়োজনিয় সংখক অস্থায়ী জনবল দিয়ে সম্পূর্ণ সফটওয়ার ভিত্তিতে টোল কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে সওজ বিভাগ।

ইজারাদারের চুক্তির মেয়াদ ২০২১ সালে হওয়ার QCBS( Quality cost Budget system) “wers EOI (expression of Interest) ২০২১ জুন আহ্বান করা হয়। পরে কয়েক দিনের সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযারী QUCBS পদ্ধতি বাতিল করে এক মাসের মধ্যে PSN Document পদ্ধতিতে নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে CPTU হয়ে বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ালে পরে পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ২৭ মে ২০২৩ তারিখে PSN এর পরিবর্তে QCBS টেন্ডার আহবান করতে সওজ এর প্রধান প্রকৌশলীকে নির্দেশ প্রদান করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক ট্রাক -কাভার্ড ভ্যান সংশ্লিষ্ট খাতের একজন নেতা বলেন, বিকল্প সড়ক ব্যবহারের সুযোগ থাকলে ড্রাইভারদের টোল রোডে গাড়ি চালানো প্রশ্নই আসে না।

টোল কমার কারণ সম্পর্কে অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড এবং পোর্ট কানেকটিং রোড ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। আগে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশের জন্য একটি মাত্র সড়ক বা পোর্ট এক্সেস রোড থাকলেও বর্তমানে আরও দুটি সড়ক ব্যবহার করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আর এই দুটি সড়ক ব্যবহার করে বন্দরে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছে বিভিন্ন যানবাহন। ওই দুটি সড়ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে টোল দিতে হয় না। মূলত এ কারণেই অনেক যানবাহন এখন টোল রোড এড়িয়ে চলছে। তাছাড়া এই রোডে ওজন স্কেল বসানো হয়েছে। সেটি চালু হলে এই রোডে যানবাহন চলাচল আরও হ্রাস পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা টোল আদায় হ্রাস পাওয়া প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার ঢাকার কাগজকে বলেন, আগে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশের জন্য সব ধরনের গাড়ি এই রোড ব্যবহার করত। এখন শুধু চট্টগ্রাম বন্দর ১ নম্বর গেটের গাড়িগুলো এই রোড (পোর্ট এক্সেস রোড) ব্যবহার করছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করব ।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম পোর্ট এক্সেস রোডে টোল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় সম্পূর্ণ সফটওয়ারের মাধ্যমে যাতে টোল ব্যবস্থাপনা সুশৃঙ্খলতা বজায় রাখা যায়। নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর বা সড়ক বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা সফটওয়ারের মাধ্যমে নিজের টেবিলে বসেই সবকিছু মনিটরিং করতে পারেন এবং সঠিকভাবে আদায়কৃত অর্থ রাজস্ব খাতে জমা হয়।

Development by: webnewsdesign.com