ব্রেকিং

x

বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় নিরাপত্তার একমাত্র পথ সূফিবাদ : সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী

মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারি ২০২২ | 293 বার

বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় নিরাপত্তার একমাত্র পথ সূফিবাদ : সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী

বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার একমাত্র পথই হচ্ছে সূফিবাদ বলে মন্তব্য করেছেন  মাইজভাণ্ডার শরীফের সাজ্জাদানশীন সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী মাইজভাণ্ডারী।

১১ জানুয়ারি, ২০২২, মঙ্গলবার, চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারস্থ পশ্চিম কাপাসগোলা মহল্লা কমিটির উদ্যোগে আন্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভাণ্ডারীয়া ও মইনীয়া যুব ফোরামের সার্বিক সহযোগিতায় মাইজভাণ্ডার মন্জিল সংলগ্ন মাঠে পবিত্র ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষ্যে সুন্নী সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাইজভাণ্ডার শরীফের সাজ্জাদানশীন সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী মাইজভাণ্ডারী বলেন, বিশ্বে যখন শান্তি ও মানবতার লেশমাত্র ছিল না, এমনই এক ক্রান্তিলগ্নে মহান আল্লাহ্ আমাদের প্রিয়নবীকে (দ.) সমগ্র সৃষ্টিকুলের রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেন। তিনি তার মহৎ আদর্শে অশান্ত পৃথিবীকে শান্তির নীড়ে পরিণত করেছেন। প্রিয়নবীর (দ.) পর সাহাবায়ে আজমাইন, তাবেঈন, আউলিয়ায়ে কেরামগণ যুগে যুগে প্রিয় নবিজীর (দ.) প্রচারিত শান্তি, সম্প্র্রীতি, ন্যায়, ইনসাফ, সাম্য ও মানবতার ধর্ম ইসলামকে অবিরাম প্রচারনার মাধ্যমে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। ইসলামে শান্তি ও সম্প্রীতির একমাত্র প্রেরণা হলো সূফিবাদ।

তিনি বলেন, সূফিবাদ সৃষ্টিকে ভালোবাসার মাধ্যমে স্রষ্টার সান্নিধ্য অর্জনের পথ দেখায়। পৃথিবীব্যাপী সূফিসাধক ও আউলিয়ায়ে কেরামগণ সমাজে ন্যায়-ইনসাফ, সম্প্রীতি ও উদার মানবিকতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের অন্তর জয় করেন নেন। তাই হাজার বছর ধরে তাঁদের মাজার বা সমাধিস্থলে জিয়ারত, জিকির, কোরআন তেলোয়াত ও জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ চলে আসছে। আউলিয়ায়ে কেরামগণ আল্লাহর বন্ধু তাঁদের মাজারে এটা কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহপাক জারি রাখবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী আরো বলেন, একবিংশ শতাব্দীতে দেশে দেশে যুদ্ধ-সংঘাত, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব, সহিংসতা, বিভেদ-বৈষম্য বেড়েই চলেছে। এর মূল কারণ আধিপত্য বিস্তারের প্রবণতা, ক্ষমতার লোভ, হিংসা-বিদ্বেষ, নৈতিকতা ও মানবিক অবক্ষয়। চরম সংকট ও অনিশ্চয়তায় অতিবাহিত হচ্ছে মানবজীবন। এই সংকটাপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রানে তাসাউফ তথা সূফিবাদ চর্চার বিকল্প নেই। সূফিবাদ মানুষের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে মানবিক গুণাবলী অর্জনে সহায়তা ও বিপথগামীতা থেকে মানুষকে আলোর পথে ফিরিয়ে এনে সোনার মানুষে পরিণত করে। তাই বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার একমাত্র পথই হচ্ছে ইসলামের মূল নির্যাস তাসাউফ বা সূফিবাদ।

সম্মেলনে চকবাজার জামে মসজিদের সাধারন সম্পাদক আজিজুল হক মঞ্জুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, নগরীর ১৬নং চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: নূর মোস্তফা টিনু, মইনীয়া যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহ্জাদা সাইয়্যিদ মেহবুব-এ-মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী, কার্যকরী সভাপতি শাহ্জাদা সাইয়্যিদ মাশুক-এ-মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী, হযরত সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী ট্রাস্টের মহাসচিব আলহাজ্ব কাজী মহসিন চৌধুরী, ১৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি আমিনুল হক রমজু, পবিত্র ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (দ.) উদযাপন পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক, হাজ্বী মোহাম্মদ সেলিম রহমান। মাওলানা মাকসুদুর রহমান ও মাইজভাণ্ডার রহমানিয়া মইনীয়া দরসে নেজামি মাদ্রাসার মুদাররিস হাফেজ নাজের হোসেনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সম্মেলন উদ্যাপন পরিষদের সদস্য সচিব আল্হাজ্ব আবু আহমেদ, উরকির চর মোহাম্মদিয়া গাউছিয়া সুন্নিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হাসান রেজা, ঘিলাতলা দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন মাওলানা মুফতী বাকী বিল্লাহ আল্-আযহারী, গোমদন্ডি দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন সৈয়দ আহমদুল হক, ইসলামী লেখক-গবেষক মাওলানা আবছার তৈয়বী, শায়খ আজমাইন আসরার, মাওলানা ইসমাইল সিরাজী প্রমুখ।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কাউন্সিলর নূরুল মোস্তফা টিনু বলেন, জামাত হেফাজত ইসলামের নামে সন্ত্রাস নৈরাজ্য চালিয়ে শান্তির ধর্ম ইসলামকে হঠকারী করে তুলেছে। তাদের এই আচরনে ইসলামের প্রতি মানুষের অনীহা এসে যায় এবং নাস্তিক্য ও জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করে।

তিনি বলেন, ইসলামের শান্তি ও উদারতার মূল নির্যাস সূফিবাদ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। আর বেশি বেশি করে এই ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করতে হবে। তিনি সুন্নিয়ত ও সূফিবাদ প্রতিষ্ঠায় আগামীতে প্যারেড গ্রাউন্ডে আরো বড় পরিসরে সু্িন্ন সম্মেলন করার জন্য আহ্বান জানান এবং তাঁর পক্ষ থেকে সকল সহযোগিতা থাকবে বলে উপস্থিত সকলকে আশ্বস্থ করেন।

মইনীয়া যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহ্জাদা সাইয়্যিদ মেহবুব-এ-মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী বলেন, বাংলাদেশ হাজারো অলি আল্লাহর পুণ্যভূমি এবং মাইজভাণ্ডার শরীফ তাঁর প্রাণ। এটি বিশ্বের অন্যতম আধ্যাত্মিক সাধনার কেন্দ্র। মহান মুক্তিযুদ্ধসহ এ দেশের মাটি ও মানুষের মনে গৌরবের সাথে জড়িয়ে আছে মাইজভাণ্ডার শরীফের নাম। বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে সুফিবাদ তথা শান্তি-সম্প্রীতির বাণী প্রচারে শায়খুল ইসলাম, হযরত সাইয়্যিদ মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী মাইজভাণ্ডারী (ক.) অনন্য অবদান রেখেছেন। তারই সুযোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এমনকি যুবকদের দক্ষতা উন্নয়ন ও মনুষ্যত্ববোধের জাগরণে তিনি কাজ করছেন। দেশের সেবায় এবং শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় তার চলমান কার্যক্রম সকলের জন্য অনুসরণীয়। মাহফিল শেষে রাসূলে পাক (দ.)’র প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ, বিশ্ববাসীর কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর একতা, দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন, সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী (মা.জি.আ.)। হাজারো আশেকে রাসুল (দ.) মুনাজাতে অংশগ্রহণ করেন।

Development by: webnewsdesign.com