সোমবার ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>
Advertisement Placeholder

প্রাণ জুড়াচ্ছে সাঁথিয়ার মাঠা ও ঘোল

জালাল উদ্দিন   |   সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   206 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

প্রাণ জুড়াচ্ছে সাঁথিয়ার মাঠা ও ঘোল

পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলায় মাঠা তৈরির ইতিহাস দীর্ঘদিনের। স্থানীয়দের কাছে ঘোল বা মাঠা একটি অপরিহার্য পণ্য। তাই এই রোজায় মাঠার চাহিদা তুঙ্গে। সরেজমিন সাঁথিয়ার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন দুপুর থেকে সাঁথিয়া বাজারের মোড়ে মোড়ে বিক্রি করা হচ্ছে ঘোল ও মাঠা। দুপুর ১২টা থেকেই মাঠার অস্থায়ী দোকান থেকে ক্রেতাদের মাঠা কিনতে দেখা যায়।

মাঠা মূলত দুধ থেকে তৈরি করা বিশেষ ধরনের ঘোল। তবে সাঁথিয়া ও বেড়ার এই ঘোলের স্বাদ ও বর্ণ দেশের অন্য এলাকার চেয়ে আলাদা। এই মাঠা আলাদা স্বকীয়তায় ভরা এবং ইতোমধ্যে এটি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পানীয়।

মাঠা তৈরিতে প্রয়োজন হয় দুধ, চিনি, লবণ, আমন্ড, পেস্তাবাদাম বাটা ও লেবু। মাঠা তৈরির জন্য আগের দিন বিকেলের মধ্যে দুধ সংগ্রহ করে জ্বাল দিয়ে দইয়ের মতো জমানো হয়। এরপর রাত ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে শুরু হয় মাঠা তৈরির মূল প্রক্রিয়া। জমানো দুধ বড় পাত্রে রেখে তা ভালোভাবে ব্লেন্ড করতে হয়। মাঠা তৈরির কারিগর বা ঘোষেরা তা নিজস্ব পদ্ধতিতে ব্লেন্ড করে থাকেন। স্থানীয়ভাবে একে ‘টানা’ বলা হয়। জমানো দুধ টানার কাজটি অত্যন্ত পরিশ্রমের। এভাবে সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে মাঠা তৈরির কাজ শেষ হয়। দুপুর ১২টার মধ্যে সেই মাঠা বাজারে নিয়ে আসা হয়।

রমজান মাসের শুরুতে বেড়ার ঐতিহ্যবাহী বিশু ঘোষের মাঠা প্রতি লিটার ৭০ টাকা, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার সলপ গ্রামের আব্দুল খালেক খান ও সাদেক খানের মাঠা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। দুধের দাম বেড়ে যাওয়াতেই মাঠার দাম বেড়েছে বলে উৎপাদনকারীরা জানান।

বেড়া পৌরসভার বনগ্রাম মহল্লার বিশু ঘোষ প্রায় ৫২ বছর ধরে মাঠা বিক্রি করে আসছেন। তাঁর তৈরি মাঠার সুনাম রয়েছে বেড়া, সাঁথিয়াসহ আশপাশের উপজেলাগুলোয়। সাধারণত বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টার দিকে তিনি প্রতিদিন প্রায় ১০ মণ মাঠা নিয়ে বাজারে বসার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় সারি ধরে ক্রেতার মাঠা কেনা। দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায় তাঁর সব মাঠা। রমজানের আগে তাঁর মাঠা ৬০ টাকা প্রতি লিটার বিক্রি হলেও, এখন তিনি ৭০ টাকায় প্রতি লিটার বিক্রি করছেন।

বিশু ঘোষ বলেন, ‘রমজানের আগে গরুর দুধের দাম ৬০ টাকা থাকলেও এখন ৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে মাঠার দাম লিটারে ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আমার মাঠা সবাই পছন্দ করেন। এ এলাকায় আমিই মাঠাকে এত জনপ্রিয় করতে পেরেছি বলে আমার বিশ্বাস। এখন অনেকেই মাঠা বানিয়ে বিক্রি করছেন।’

সাঁথিয়া-বেড়ার পাশের উল্লাপাড়া উপজেলার সলপ গ্রামে তৈরি হওয়া মাঠারও বেশ সুনাম রয়েছে। অনেকেই সেখান থেকে এই মাঠা এনে বিক্রি করেন। সাঁথিয়া বাজারে সলপের মাঠা বিক্রেতা সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘দুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদনকারী মাঠার দাম বাড়িয়েছেন। সাঁথিয়া ও বেড়ার মাঠার চাহিদার পাশাপাশি রয়েছে সলপের মাঠার চাহিদা। উল্লাপাড়ার সলপের মাঠা ১২০ টাকা এবং ১০০ টাকা কেজিতে ঘোল বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৮ মণ মাঠা বিক্রি করছি।’

সাঁথিয়া বাজারের আরেক মাঠা বিক্রেতা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মুদি দোকানের পাশাপাশি প্রতিদিন প্রায় তিন মণ মাঠা বিক্রি করি; যা রমজান মাসে বাড়তি আয় করতে সহায়ক হয়েছে। এ ছাড়া আরও অনেকেই মাঠা ও ঘোল বিক্রি করছেন।’

সাঁথিয়ার জোড়গাছা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন উল্লাস বলেন, ‘রোজা থাকার পর আমাদের শরীরে পানির স্বল্পতা দেখা দেয়। ঘোল ও মাঠা পানে অনেকটাই ভালো লাগে। পরিবারের সবাই অন্য সময় না খেলেও, এ রমজানে ঘোল ও মাঠা পান করেন। ইফতারে শীতল মাঠা দিয়ে বানানো শরবতের স্পর্শ ছাড়া মনই ভরে না।’

সাঁথিয়ার শালঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম রিপন জানান, মাঠার সঙ্গে লেবু ও বরফের কুচি মিশিয়ে ইফতারে শরবত বানানো সাঁথিয়া ও বেড়ার পুরোনো ঐতিহ্য। এখন ইফতারে কিংবা অন্য আয়োজনে মাঠা একটি ঐতিহ্যবাহী উপকরণ। এই এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাঠা এখন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠেছে।’

Facebook Comments Box

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক
মোঃ মাসুদ রানা হানিফ

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়

৮৯/৭ আর কে মিশন রোড, গোপীবাগ, ঢাকা-১২০৩।

মোবাইল : ০১৯২০-০০৮২৩৪, ০১৯৭০০৯০০০৯

ই-মেইল: dhakarkagoj1@gmail.com