সোমবার ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>
Advertisement Placeholder

৫০০ বছরের সাক্ষী জয়সাগর দিঘি

এম. আতিকুল ইসলাম বুলবুল   |   সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   45 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

৫০০ বছরের সাক্ষী জয়সাগর দিঘি

সিরাজগঞ্জ সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার পশ্চিমে রায়গঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলায় যে ক’টি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে, তার মধ্যে প্রায় ৫০০ বছর আগের ‘জয়সাগর দিঘি’ অন্যতম। উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নের নিমগাছী ও গোঁতিথা নামের দুটি গ্রামের মধ্যস্থলে জয়সাগর দিঘির অবস্থান।
জয়সাগর দিঘি নিয়ে প্রচলিত আছে নানা গল্প ও রূপকথা। জানা যায়, শুরুতে জয়সাগর দিঘির দৈর্ঘ্য ছিল আধা মাইল, প্রস্থ ছিল আধা মাইলের সামান্য কম। এর আয়তন ছিল প্রায় ৫৮ একর। বিশালাকার দিঘিটি নিয়ে এ অঞ্চলে প্রবীণদের মাঝে অনেক রূপকথা বা লোককথা প্রচলিত আছে। যেমন– সেন শাসনামলে সেন বংশীয় রাজা অচ্যুত সেন গৌড়াধিপতি ফিরোজ শাহের করদ রাজা ছিলেন। তাঁর রাজধানী ছিল কমলাপুর। ফিরোজ শাহের পুত্র বাহাদুর শাহ অচ্যুত সেন রাজার কন্যা অপরূপ সুন্দরী ভদ্রাবতীকে দেখে মুগ্ধ হন। তিনি তাঁকে বিয়ে করার প্রস্তাবও দেন। রাজা অচ্যুত সেন সম্মত না হওয়ায় বাহাদুর শাহ রাজধানী কমলাপুর আক্রমণ করে ভদ্রাবতীকে অপহরণ করে নিমগাছীতে নিয়ে যান। রাজা অচ্যুত সেন তাঁর সৈন্য বাহিনীসহ বাহাদুর শাহকে আক্রমণ করেন। দু’পক্ষের মধ্যে ১৫৩২-৩৪ খ্রিষ্টাব্দে নিমগাছী এলাকায় ব্যাপক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে রাজা অচ্যুত সেন জয়লাভ করে কন্যা ভদ্রাবতীকে উদ্ধার করেন। এ বিজয় গৌরবের স্মৃতি হিসেবে এবং পরকালের কল্যাণের জন্য তিনি ‘জয়সাগর’ নামে এক দিঘি খনন করান। ইতিহাসসিদ্ধ কথা হলো–যুদ্ধ জয়ের জন্যই দিঘিটির নামকরণ করা হয় ‘জয়সাগর’। খনন শেষে ২৮টি শান বাঁধানো ঘাট দিয়ে ‘জয়সাগর’ দিঘি তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে এসব ঘাটের কোনো চিহ্ন অবশিষ্ট নেই।
এ ছাড়া রাজা জয়সাগর দিঘি ছাড়াও তাঁর সেনাপতি প্রতাপের নামে প্রতাপ দিঘি, ভৃত্য উদয়ের নামে উদয় দিঘি ও কন্যা ভদ্রাবতীর নামে ভদ্রা দিঘি খনন করেছিলেন। জয়সাগর দিঘির এ ইতিহাস নিয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদ নগেন্দ্রনাথ বসুর মত অনেকটা ভিন্ন। তাঁর মতে– জয়সাগর দিঘি খনন করা হয় বিরাট রাজার কল্যাণে। অচ্যুত সেনই বিরাট রাজা। কিংবদন্তি লোকগাথা সূত্র বলে, একবার নিজের বিরাটত্ব জানান দিতে বিভিন্ন অঞ্চলের ১২ জন রাজাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এনে হত্যা করেন তিনি। এরপর পাপমোচনের জন্য ‘জয়সাগর দিঘি’ খনন করেন। দিঘি খনন করার পর তাতে পানি উঠছিল না। বিরাট রাজা স্বপ্নে জানতে পারেন জয়কুমার নামের একজন রাজকুমার দিঘিতে বেলের পাতা রেখে দিলে পানি উঠবে। রাজা জয়কুমারকে দিঘির বিষয়টি খুলে বলেন।
রাজপুত্র দিঘিতে নেমে কোদাল দিয়ে কোপ দিতেই পানিতে ভরে যায়। তবে জয়কুমার দিঘির পাড়ে উঠতে পারেননি। দিঘির পানিতে ডুবে মারা যান। স্বামীকে হারিয়ে তাঁর স্ত্রী অভিশাপ দেন, এই দিঘির কারণে তিনি বিধবা হয়েছেন, তাই এর পানি যেন কারও কাজে না লাগে।
কথিত আছে, অনেক দিন এই দিঘির পানি ব্যবহারের অনুপযোগী ছিল। স্থানীয় প্রবীণরা জানান– দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেও জয়সাগরের চারপাশ বনজঙ্গলে ভরপুর ছিল। ছিল দিঘির চারপাশে বহু বেলগাছ। একটি কথা এখনও প্রচলিত আছে– ‘যার মাথায় আছে তেল, সে খাবে জয়সাগরের বেল’।
আশির দশক থেকে ২৫ বছর গ্রামীণ মৎস্য ফাউন্ডেশন লিজ নিয়ে সুফলভোগীদের নিয়ে এখানে মাছ চাষ করেছে। বর্তমানে নিমগাছী সমাজভিত্তিক মৎস্য চাষ প্রকল্পে (রাজস্ব) মাধ্যমে সুফলভোগীদের মাধ্যমে সরকারিভাবে মাছ চাষ করা হচ্ছে। জয়সাগর দিঘি দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ আসেন। শীতকালে এ জলাশয়ে শত শত পাখি ভিড় জমায়। তখন বেড়াতে আসা মানুষের সংখ্যাও বেড়ে যায়। তবে এখানে বিশ্রামের জন্য রেস্টহাউস, বসার স্থান, খাবার, স্যানিটেশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তাদের বিড়ম্বনা পোহাতে হয়।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক
মোঃ মাসুদ রানা হানিফ

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়

৮৯/৭ আর কে মিশন রোড, গোপীবাগ, ঢাকা-১২০৩।

মোবাইল : ০১৯২০-০০৮২৩৪, ০১৯৭০০৯০০০৯

ই-মেইল: dhakarkagoj1@gmail.com